রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মহাসড়ক ও এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সর্দারসহ ১১ জন সদস্যকে রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র এবং ডাকাতির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩।
এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, প্রতারক চক্র, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী, মানবপাচারকারী, জালনোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী এবং ডাকাতসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট।
গত ৩১/১২/২০২৩ তারিখ কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার ভিকটিম শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। গত ৩১/১২/২০২৩ তারিখ রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানীর হেড অফিস হতে ১২৫ টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে রাত ০৩৩০ ঘটিকায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা টু নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপ যোগে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ডাকাত দল ভিকটিমকে তার পিকআপ হতে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করে এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী এসে আহত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং নিকটস্থ থানায় সংবাদ দেয়। উক্ত ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১/১২/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতার মামলা করা হয়। উক্ত ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১/১২/২০২৩ তারিখ ২২০০ ঘটিকায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের নেতা মোঃ আবুল হোসেন (৩৫), পিতা-মোঃ ছলিম উদ্দিন, সাং-পূর্বগ্রাম মোল্লাপাড়া, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ এবং তার অন্যতম সহযোগী মোঃ রহমত আলী (২৮), পিতা-রাজা মিয়া, সাং-ধুইয়ারপাড়, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ, মোঃ জসিম মিয়া (৩৩), পিতা-মোঃ মান্নান মিয়া, সাং-ধুইয়ারপাড়, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ, মোঃ নয়ন মিয়া (২৪), পিতা-মোঃ লিটন মিয়া, সাং-জিনজিরা, থানা-কদমতলী, ডিএমপি, ঢাকা এবং মোঃ ইব্রাহীম (২৬), পিতা-মৃত নুর মোহাম্মদ, সাং-হাজীরটেক, থানা-আড়াইহাজার, জেলা-নারায়নগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ০১ টি পিকআপ, ০১ টি চাপাতি, ০১ টি ছুরি, ০৪ টি গামছা, ০৩ টি রশি, ০৫ টি মোবাইল ফোন, ০১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ৭৩১০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত উপরোক্ত ০৫ জনের দেয়া তথ্যমতে ০১/০১/২০২৪ তারিখ রাত ০১৩০ ঘটিকায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য মোঃ ইদ্রিস (২৩), পিতা-আঃ মান্নান, সাং-হাজীপুর, থানা-বেগমগঞ্জ, জেলা-নোয়াখালী, মোঃ মাসুদ রানা (২৬), পিতা-রানচান মিয়া, সাং-কামালপুর, থানা-আজমেরী, জেলা-হবিগঞ্জ,  মোঃ কফিল উদ্দিন (৩২), পিতা-মৃত আশরাফ, সাং-গুমগুমিয়া, থানা-নবীগঞ্জ, জেলা-হবীগঞ্জ, হাসান আলী (২৩), পিতা-মোঃ রহমাত আলী, সাং-ধুইয়ারপাড়, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে ৩১/১২/২০২৩ তারিখে কুমিল্লার লালমাই হতে ছিনতাইকৃত ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ০১ টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ০১ টি বলেরো পিকআপ, ০১ টি চাপাতি, ০১ টি ছুরি, ০৩ টি লোহার রড, ০৩ টি স্ক্রু ডাইভার, ০১ টি টেপ, ০৪ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও উপরোক্ত ০৪ জনের দেয়া তথ্যমতে ০১/০১/২০২৪ তারিখ ২২০০ ঘটিকায় রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা হতে দলের অন্য সহযোগী ১। মোঃ জুয়েল (৩৫), পিতা-সাইদুর রহমান, সাং-ধুইয়ারপাড়, থানা-ইটনা, জেলা-কিশোরগঞ্জ এবং ২। মোঃ আলমাস (২৭), পিতা-আব্দুল হক, সাং-পিংগিলা, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জদেরকে ০১ টি চোরাই পিকআপ ও ০২ টি মোবাইলসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলটির সকল সদস্যই বর্তমানে রাজধানী, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, তারা মহাসড়কে নির্জন কোন স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সকলকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টীলের পাইপ ইত্যাদি দ্বারা মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে দ্রæত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। একই উপায়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়ি কেও টার্গেট করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। যখন মহাসড়কে ডাকাতি করা সম্ভব না হয় তখন বাড়িঘর এবং দোকানপাটে তারা ডাকাতি করে থাকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে সর্বশেষ রাজধানীর কদমতলী থানাধীন এলাকায় একটি পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ০১টি চোরাই পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিসহ র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল কর্তৃক হাতেনাতে গ্রেফতার হয়।

 গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার এই পেশার আড়ালে সে সরাসরি উক্ত ডাকাত দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার সাথে অন্যতম সহযোগী হিসেবে মাসুদ রানা ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করত। মাসুদ মূলত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং সে তার ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করত। মাসুদ এর নামে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ডাকাতি মামলায় ২৭ দিন কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে পুনঃরায় ডাকাতির কাজ শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। ডাকাতিকৃত যানবাহনগুলো তারা সু-কৌশলে বিভিন্ন ¯হানে চোরাকারবারীর নিকট পৌছে দিত। জসিমের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানায় এবং পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ০২ টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও জুয়েল ডাকাতি করে আনা কিছু গাড়ি সংরক্ষণ করতো। জুয়েলের নামে ০১ টি দস্যুতা মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয় বিক্রয় করতো। পাশাপাশি সে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতো। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ০১ টি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২৩ দিন কারাভোগ করে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জামিনে বের হয়ে পুনঃরায় সে ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও ইদ্রিস ০১ টি চুরির মামলায় অভিযুক্ত আসামী।

গ্রেফতারকৃত রহমত পেশায় একজন ড্রাইভার। সে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে ডাকাতির জন্য দূরবর্তী স্থানে ভাড়া নিয়ে যাওয়া যানবাহনসমূহের তথ্য সহজেই সংগ্রহ করতো। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানায় ০১ টি মাদক মামলা এবং গাজীপুর কাপাশিয়া থানায় ০১ টি চুরির মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। সে তার পেশার আড়ালে চোরাকারবারীদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং ডাকাতি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রয় করতো।

গ্রেফতারকৃত ইব্রাহীম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এবং নয়ন ০১টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করে। পেশার আড়ালে  তারা ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। নয়নের বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় ০১টি মাদক মামলা রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত হাসান পেশায় একজন ড্রাইভার এবং কফিল উদ্দিন বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করে থাকে। এসব পেশার আড়ালে তারা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতো। ধৃত হাসান পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় ০১ টি চুরির মামলায় ০২ মাস কারাভোগ করে। এছাড়াও ধৃত কফিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ০৪ টি মাদক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।